সিঙ্গাপুরে এক বাসায় কাজ করতো ফিলিপিন্স থেকে আসা এক গৃহশ্রমিক। কিন্তু তাকে এক ধরনের অভুক্ত অবস্থাতেই রাখতো তার মনিবেরা। এই ঘটনা জানাজানি হবার পর পুরো শহরকে স্তম্ভিত করে দেয়।
ওই গৃহশ্রমিককে অভুক্ত রাখার দায়ে সিঙ্গাপুরের সেই দম্পতির কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ফিলিপিন্সের ওই গৃহশ্রমিক কাজ করার সময় ভালো করে খেতে পেতেননা। শুধুমাত্র শুকনা পাউরুটি আর নুডলস এ দুটো খাবার তার কপালে জুটতো। আর ওই বাসায় কাজ করতে যেয়ে অন্তত বিশ কেজি ওজন কমে গিয়েছিল তার।
গৃহশ্রমিককে ঠিকভাবে খেতে না দেয়ায় লিম চুন হংকে তিন সপ্তাহ ও তাঁর স্ত্রী চং সুই ফুনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের অনেক পরিবারেই গৃহশ্রমিক রাখার প্রচলন রয়েছে। বেশিরভাগই প্রতিবেশী দেশের নাগরিক অর্থাৎ অভিবাসীদের গৃহশ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়। আর সেখানে অত্যাচারের ঘটনাও নতুন কিছু নয়।
কিন্তু ফিলিপিন্সের গৃহশ্রমিক থেলমা ওয়াসান গায়িদানের ওপর অত্যাচারের এ ঘটনায় পুরো শহরে আলোচনার ঝড় ওঠে।
কেন সাহায্য চাইতে পারেননি?
প্রায় ১৫ মাস ধরে পাউরুটি ও নুডলস খেয়ে বেঁচে ছিলেন তিনি। কাজে আসার আগে যার ওজন ৪৯ কেজি থাকলেও, এক বছরেই সেটি ২৯ কেজিতে এসে পৌঁছায়।
আদালতকে তিনি জানিয়েছেন, দিনে দু’বেলা খুব সামান্য পরিমাণে খাবার তাঁকে দেয়া হতো। গৃহকত্রীর কাছে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ক্ষুধা মেটানোর প্রয়োজনীয় খাবার তিনি পাননি কখনো।
একটি স্টোররুমে তিনি থাকতেন এবং সপ্তাহে মাত্র এক বা দুদিন তাকে গোসল করার অনুমতি দেয়া হতো।
মিস গায়িদানের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন নিয়ে নিয়েছিল তাঁর মনিবেরা এবং সেকারণেই অনেকদিন কোনো সাহায্য কারো কাছে চাইতে পারেননি তিনি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ওই বাড়ি থেকে পালাতে সক্ষম হন এবং অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তায় কাজ করে এমন একটি সংস্থার কাছে সাহায্য চান।
তার চাকরিদাতা ব্যবসায় লিম চুন হং ও তাঁর স্ত্রী চং সুই ফুন নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন।
তবে তারা এটাও দাবি করেছেন, তারা নিজেরা যেভাবে চলেন সেভাবেই মিস গায়িদানের সাথে তারা ব্যবহার করেছেন। খাওয়া ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চংয়ের মধ্যে কিছু বদ্ধসংস্কার থাকায় তারা কম খান এবং সপ্তাহে এক-দুইবার গোসল করেন।
তবে আইনজীবীরা বলেছেন, ওই পরিবারের সদস্যরা অনেক ভালো ভালো খাবার খায় এবং মাসেও তাদের বেশ খরচ রয়েছে। ওই দম্পতিকে অন্তত এক বছর জেল দেয়ার আহ্বানও জানান আইনজীবীরা।
তবে মি: লিমকে তিন সপ্তাহের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার জরিমানা করা হয় এবং তার স্ত্রী চংকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
তবে সোমবার এই রায়ের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে আদালত তাদের প্রতি সহনশীল আচরণ দেখিয়েছে।
“খুব কম দণ্ড দেয়া হয়েছে…..একটা মানুষকে অভুক্ত রাখা এটা খুবই অমানবিক” -সিঙ্গাপুরে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে গৃহশ্রমিকের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে এবং আদালতেও এসব মামলা উঠেছে।
শহরটিতে গৃহশ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে, কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন এই নীতিমালা গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় খুব বেশি কাজে আসছে না।